মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০১৭

বিধান না দর্শন?


যারা মোটরগাড়িটাকে বিশ্রাম দেবার জন্য,রোদ-বৃষ্টি হতে বাঁচাবার জন্য তৈরি করে ইটের তৈরি ঘর,তাদের কাছে শোষিত বেকার যুবক,ঘর নেই মানুষের রাস্তার ধারে ঝুপড়ি বানিয়ে শিশু সন্তানদের নিয়ে কী মন কাঁদানো অবস্থায় জীবনটাকে খড়-কুটা ধরে বাঁচার মত বেঁচে আছে -এদের কতটুকু দাম থাকতে পারে?কতটুকু নিম্নমানের পশুর চেয়েও নিম্নমানের হলে পৃথিবীর কোনো জীব-জন্তুদের সঙ্গেও তুলনা দেবার নিদর্শন নেই বলেই এরা "আসফালুস সাফেলিন" অর্থাৎ উদাহরণ দেবার মতো বিশেষণ ছাড়া একদম নিউ মডেলের পশু।এই সম্পদ জমাকারীরা ধনের নেশায় ভয়ঙ্করভাবে নেশাগ্রস্ত।এই নেশার তুলনা নেই,এ নেশা হেরোইন আর পেথিডিনের মতো মৃত্যুর নেশাকেও হার মানায়।হেরোইন আর পেথিডিন তো একটা যুবশক্তির মূলে আঘাত হানে।কিন্তু সম্পদ জমাকারীদের নেশা একটি দেশের অধিকাংশ মানুষের নিম্নতম মানবিক শক্তির উপরই প্রচন্ড আঘাত হানে না,বরং সামান্যতম বিবেকের বিন্দুটিকে পায়ের তলায় পিষিয়ে মারছে--যখন দেখতে পাই প্রাণহীন লৌহের তৈরি  মোটরগাড়িটা থাকে ইটের তৈরি দালানে, আর আল্লাহপাকের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষগুলো থাকে ফুটপাতের পাশে ঝুপড়িতে।হজরত ইমাম শাফি একবার দুঃখ করে বলেছিলেন যে,"পাক পাঞ্জাতন(মহানবি,আলি,ফাতেমা,হাসান,হুসাইন)
-কে ভালোবাসতে গিয়ে যদি "শিয়া" অপবাদ মাথায় তুলে নিতে হয়, তবে খোদার কসম!আমার চেয়ে বড় শিয়া আর কেউ নেই।"অধম লেখকও হজরত ইমাম শাফির মত চিৎকার দিয়ে বলতে চায় যে,এই নিঃস্ব,এই রিক্ত,এই এতিম, মিসকিনদের অধিকারের কথা বললে যদি "কমিউনিস্ট" অপবাদ মাথায় তুলে নিতে হয়,তা হলে খোদার কসম!অধম লিখককে "কমিউনিস্ট" বলে গাল দিতে পারেন।এবং সেই সঙ্গে এ কথাটি বলে দিতে চাই যে,অনাগত যুগই এর সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়ে যাবে।আমরা বালির বাঁধের মতো অনেক বই পুস্তকের বস্তা দিয়ে বাঁধ দিতে চেষ্টা করছি মাত্র।এই সব বই পুস্তকে আমাদের পরের প্রজন্ম 'খাক-থু করে একগাদা থুথু নিক্ষেপ করে ঘৃণিত বেইমান জানবে।হেরোইন জমাকারীর যদি মৃত্যুদন্ড নামক শাস্তিই যোগ্য বলে বিবেচিত হয়,তা হলে যারা সম্পদ জমা করে এহেন অবস্থা তৈরি করে তাদের জন্য কী শাস্তি?

খলিফা ওমর ফারুক জেরুজালেম যাচ্ছেন উটের পিঠে চাকরকে বসিয়ে।তারপর?মার্কস,লনিন আর মাও সে তুং-এর বিবেকের চোখে বোবা বিস্ময়!সেই উটের রশি ধরে টেনে চলেছেন একশত বাংলাদেশের চাইতেও বড় দেশের প্রধান।দুটি মিনিট নেগেটিভ চিন্তার দর্শন মন হতে সরিয়ে চিন্তা করুন তো!চিন্তা করুন বাংলাদেশের উঁচু (?) পদের একজন সরকারী কর্মচারীর পক্ষেও কি এই আচরণ প্রদর্শন করা সম্ভব?ভাতের হাড়ির সাম্যের সামনে পদমর্যাদার সাম্য নির্ঘাত আত্মহত্যা,নয়তো পদত্যাগ পত্রের প্রশ্নটি কি অবধারিত?মাওলানা ভাসানী যখন ওমর ফারুকের এই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন মাও সে তুংকে,তখন মাও সে তুং কেবল একটি কথাই বলেছিলেন:বিবেকের সাম্যবাদকে গ্রহন করা আরো জটিল।হ্যাঁ তাই।মানুষের রক্ত শোষণ করে যারা সম্পদের পাহাড় তৈরি করে উপাসনালয়ে বাঁচার আশ্রয় গ্রহণ করে তারা তখন?তখন ঐ জনতার একটি কণ্ঠস্বর শ্লোগানের ভয়ঙ্কর ঢেউ তোলে:"যে ঘরে তোদের মত শোষক,জালেম আর সম্পদ জমাকারীরা আশ্রয় গ্রহণ করে সে ঘর আর যাই হোক না কেন,ওটা কখনোই আল্লাহর ঘর হতে পারে না।" এক সের হেরোইনসহ ধরা পড়া আসামীর দিকে যে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায়,সে তাকানোর ভাষা হলো মৃত্যুদণ্ড।আর যারা দশের আমানত বেমালুম হজম করে বসে আছে তাদের দিকে তাকাবো কীভাবে?বলবেন কি?বুকে হাত রেখে বলুন,কী ধরনের উপহার পাবার যোগ্য তারা? এই বিবেকের দাঁড়িপাল্লায় উঁচু-নিচু হবার ঝড় বইতে চায়।আল্লাহপাক আমাদের শাহারগের চেয়েও নিকটে আছেন,আছেন রবরূপে,আছেন আদিল তথা সূক্ষ বিচারকরূপে আমাদেরই একান্ত কাছে কাছপ।আছেন আমাদেরই অস্তিত্বের প্রতিটি সূক্ষতম কোষে-কোষে।কী অপূর্ব কোরানের আটষট্টি নম্বর সূরা কালাম।কী বিজ্ঞানময় সূক্ষ ভাষার গাঁথুনি সূরা কালামে।পৃথিবীতে এই বিজ্ঞানময় কোরআনের তুলনা করা হাস্যকর।কারণ,কোরানই হলো একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন।

মার্কসবাদ হাঁড়ির ইতিহাস তৈরি করতে গিয়ে নাস্তিকতাকে কোলে তুলে নিয়েছে।হাঁড়ির ইতিহাস আত্মার গবেষণাকে ফেলে দিয়ে মুক্তির বাণী শোনায়।কিন্তু অসম্ভব।আপেক্ষিক (কিছু দিনের জন্য) সত্যরূপে প্রতিভাত হলেও সার্বিক(সব সময়ের জন্য) সত্যের সামনে মার্কসবাদ মাথা নিচু করে কাঁদে।কাঁদতে হবেই,এটা অমোঘ সত্য।তাই তো মার্কসের 'হাড়িইজম' বার বার রোগা হচ্ছে আর পরিবর্তনের ইংজেকশন দিয়ে তাকে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে।কিন্তু যেদিন বিশ্বনবির কণ্ঠ হতে নির্গত আল্লাহর মহাবাণী কোরান- এর মর্মবাণী উদ্ধার করা হবে, উদ্ধার করা হবে সর্বযুগের জীবনব্যবস্থার একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন, সেদিন মার্কসবাদ এইডস রোগে আক্রান্ত হতে বাধ্য।যেদিন হজরত বাবা শাহ সুফি লালান ফকিরের অতি সহজ শব্দের গাঁথুনিতে রচিত পদ্যে কোরান-এর ব্যাখ্যা বাহির করতে পারবে -কারণ অধ্যাত্মবাদের মধ্যেও যে একটি অধ্যাত্মসাম্য থাকতে পারে তারই সম্রাট হলেন লালন ফকির-যেদিন ইমাম হোসায়েনের ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে,যেদিন এজিদের রঙ-চড়া, চোখ ধাঁধানো মরীচিকার ইমিটেশন মার্কা এজিদি ইসলামকে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করতে পারবে,সেইদিন কি হোসায়েনি ইসলামের হাঁটি হাঁটি পায়ে চলার বাস্তব রূপটি কোথাও প্রতিফলিত হবে?

দৈহিক মৃত্যুই যেখানে সবকিছুর শেষ সিদ্ধান্ত বলে ধরে নেওয়া হয় এই পৃথিবীর জীবনটাই একমাত্র সত্য,সেখানে কেবল মার্কসবাদই নয়,বরং যে কোনো নব্য আর পুরাতন মতবাদে (ইজম) রূপ আর যুক্তির নাচানাচির ঢং যতই আপাতত নিখুঁত বলে মনে হোক না কেন, কিন্তু খুব ধীরে ধীরে যখন গর্তে পড়ে হাত-পা ভাঙার অনেক দৃশ্য দেখতে পাবে, তখনই চালানো হয় ঔষধ আর ব্যান্ডেজ লাগাবার নতুন নতুন প্রয়োগ ব্যবস্থা।কারণ,আপেক্ষিক সত্ঢ়ের প্রশ্নে এরা দৈহিক মৃত্যুটাই সব কিছুর শেষ বলে সিদ্ধান্ত নেবার ঘোষণা করে নি,বরং সার্বিক সত্যরূপে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার ঘোষণা করা হয়েছে।যার দরুণ প্রয়োগপদ্ধতিটাই মুখ্য এবং এই প্রয়োগপদ্ধতিটার যতই নতুন নতুন ধরণ ধারণ বাহির করা হোক না কেন,উহা হয়ে পড়ে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শনের পরিবর্তে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। "একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান"- বার বার এই ভুলটি এত বেশি প্রচার করা হয়েছে, যার দরুণ মগজ ধোলাই করার মতো "পূর্ণাঙ্গ দর্শন"-এর চেহারার ভুল নাম "পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান" বলা হয়।এ জন্যই এর ফলটির অনেক রকম নাম হতে পারে -যেমন:বস্তুসর্বস্ববাদ,যান্ত্রিক জীবন,আইন সর্বস্ব ধমক দেবার বাহার,আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ।এ রকমভাবে অনেক নাম দেওয়া যায় এবং যার ফলে অধ্যাত্মবাদ,মরমিবাদ,সুফিবাদ,ফকিরি ইত্যাদি নামের পরকালভিত্তিক দর্শনগুলোকে কেমন করে গ্রহণ করা যায় এ চিন্তা না করে বরং ছুঁড়ে মারে যতসব জঘন্য গালাগালির বিশ্লেষণ-যেমন অজ্ঞেয়বাদ,গাঁজাখুরি,ভণ্ডামি,ফুল বাবুর চিন্তাধারা,অলস মাথার বিকৃত ফসল ইত্যাদি।

মৃত্যুর পরও জীবন আছে, পরস্কার আর শাস্তি আছে।যদিও এগুলো সাদা চোখে ধরার মোটেও উপায় নেই।তবুও এই অধ্যাত্মবাদকে কেউ মারতে পারবে না-এটা সারাজীবন নাস্তিক্যবাদের পূজারি ও প্রচারক হবার পর দৈহিক মৃত্যুর সামনে এসে অকারণেই অধ্যাত্মবাদের কুয়াশা কাঁদায়।এটা যেন আগাছা মনে হলেও আপনিই গজায়।জীবনে কোনোদিন চাষ করা তো দূরে থাক,মনেও করতে চায় নি।সেই অধ্যাত্মবাদ মৃত্যুর সামনে এসে আগাছার মতো আপনিই গজিয়ে উঠবে।হ্যাঁ,গজাবেই।কারণ,এটাই যে জীবনের পূর্ণাঙ্গ দর্শন,যা সে নিজের ইচ্ছায় নয় বরং সামাজিক জীবন ব্যবস্থায় আত্মবিরোধ দেখে বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে।কিন্গু মানুষের দৈহিক মৃত্যু যতদিন থাকবে ততদিন অধ্যাত্মবাদকে কেউ মেরে ফেলতে পারবে না।কারণ,এটা এমনই এক জিনিস যা কেউ ঝেঁটিয়ে চিরবিদায় করে দিতে চাইলেও আবার আপন ঘরেই বুমেরাং-এর মতো ফিরে আসে।লৌকিকতার অবগুণ্ঠনে অস্বীকার করছে,কিন্তু মৌনতার অবগুণ্ঠনে অধ্যাত্মবাদের দরজার সামনে মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।সত্যিই আল্লাহ পাক,তুমি মহান না নিষ্ঠুর জানি না,জানার জন্য চেষ্টাও করিনি কোনোদিন।কিন্তু আজ বিদায় বেলায় কেন মনের একান্ত গর্ভে তোমার কথা মনে হয়?যিশুর মহাক্ষমার দর্শন:"এক গালে চড় মারলে আর এক গাল পেতে দাও।" "আল্লাহ তুমি ওদের ক্ষমা করে দাও,ওরা যা করছে তা ওরা নিজেরাই জানেনা।"-এ রকম কত উপদেশকে কত রকম কুৎসিত আর জঘন্য বিশ্লেষণের কাপড় পরিয়েছি,কিন্তু মৃত্যুর শেষ প্রান্তে এসে অকারণেই বুকে জড়িয়ে ধরে সবার অলক্ষে মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে।তবে কি ঐ ক্ষমার বাণীই সার্বিক সত্য?যদিও আপেক্ষিক অর্থে এতকাল জেনেছি অন্যরকম। 

          মারেফতের গোপন কথা        ডা: বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল  সুরেশ্বরী



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন