বুধবার, ৭ জুন, ২০১৭

রোজা বিষয়ে আলোচনা পর্ব ৪


এখন আমরা রোজার বিষয়ে খাজা বাবা কী বলেছেন তারই কিছু অংশ নিুে তুলে ধরলাম : ‘মহানবি বললেন, ‘হে উমর, রোজার হাকিকি অর্থটি হচ্ছে, মানুষ তার অন্তর বা দিল হতে সর্বপ্রকার দ্বিন ও দুনিয়ার আশা-আকাক্সক্ষা পরিত্যাগ তথা দূরীভূত করবে। কারণ দ্বিনের খাহেশ, যেমন―বেহেস্তের আরাম-আয়েশ, সুখ-শান্তি ও হুরদের আকাক্সক্ষা―দ্বিনের এই সব খাহেশ আবেদ ও মানুষের মধ্যে পর্দার অন্তরাল তৈরি করে। এই রকম চাওয়া-পাওয়া দিলের মধ্যে থাকলে বান্দা কখনো তার মাবুদের হাকিকতের নৈকট্য লাভ করতে পারে না।’
‘অপরদিকে দুনিয়ার খাহেশ তথা চাওয়া-পাওয়ার মোহনীয় আকাক্সক্ষাটি হলোÑ ধন-দৌলত, শান-শওকত, ক্ষমতার অহঙ্কার, নফ্সের অনেক রকম খাহেশ, দুনিয়া অর্জনের নেশায় মত্ত থাকা ইত্যাদি জাগতিক বিষয়গুলোর আকাক্সক্ষা মানুষকে আল্লাহ হতে দূরে সরিয়ে দেয় এবং এই সব বিষয়ের আকাক্সক্ষায় ডুবে থাকাটাই হলো শেরেকে ডুবে থাকা। আল্লাহকে ছেড়ে এই সব বিষয়ের প্রতি খেয়াল ও ফেকের করা এবং আবার কেয়ামতের ভয়, বেহেশতের আশা করা এবং আখেরাত বিষয়টির ফেকের করা―এই সবগুলো বিষয়ই রোজার হাকিকি তথা আসল রোজা নষ্ট তথা বরবাদ করে দেয়। আসল রোজা তথা রোজার হাকিকি তখনই সঠিক হবে যখন বান্দা আল্লাহ ছাড়া অন্য সবগুলো বিষয় দিল থেকে তথা অন্তর হতে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। এমনকি গায়রুল্লাহর (বিষয়মোহ) এলেম পর্যন্ত থাকে না এবং সব রুম উমিদ (আশা) ও ভয়ভীতি দেল হতে তথা অন্তর হতে দূর করে দিতে পারে।’
‘হে উমর, সাধারণ মানুষ যে রোজা রাখে তা হাকিকি তথা আসল রোজা নয়। কারণ ইহাতে শুধু পানাহার ও জেমাহ থেকে পরহেজ থাকে। সাধারণ মানুষের রোজাটিকে মেজাজি রোজা বলে জানিও। এই মেজাজি রোজা দ্বারা আসরারে এলাহি (খোদার রহস্য জ্ঞান) হাসিল হয় না। মেজাজি রোজাটি কেবলমাত্র জাহেরি সুরতে সীমাবদ্ধ। এই মেজাজি রোজা হাকিকত বিষয়টির কিছুই বুঝতে পারে না, বরং অন্ধকারে থেকে যায়। এই মেজাজি রোজা দ্বারা গায়রুল্লাহ পরিত্যাগ সম্ভব হয় না। বরং এই মেজাজি রোজায় সর্বপ্রকার নফ্সানি ও মানবীয় কলুষতা থেকে যায়। মেজাজি রোজাদারদের যাবতীয় কথাবার্তা এবং কাজকাম তথা কার্যাবলি গায়রুল্লাহ হতে পরিপূর্ণ থাকে। এইরূপ জাহেরি ও মেজাজি রোজা দ্বারা এতটুকু লাভ হতে পারে যে, গরিব, দুঃখী ও মিসকিনদের দুঃখ-ব্যথা সম্যকভাবে উপলব্ধি করা যায় এবং তাতে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে তাদের অভাব কিছুটা লাঘব করা যায়।’ (দিওয়ানে মুঈনুদ্দিনÑপৃ. ৪৩৭)।
হাকিকি রোজা যতই আসল রোজা হোক না কেন, মেজাজি রোজাটি অবহেলা করা যায় না। মহানবি সমস্ত আলমের জন্য রহমত, সুতরাং বিশেষ শ্রেণীই এই রোজার রহমত পাবে আর সবাই পাবে না এটা হতে পারে না। তাই সাধারণকেও এই রহমতটি দিয়ে যাবার যে ব্যবস্থাপত্রটি মহানবি দিয়ে গেছেন উহাকেই মেজাজি রোজা বলা হয়। তবে মেজাজি রোজার অনুশীলনের মধ্য দিয়েই হাকিকি রোজার রহস্যটি যখন বুঝতে পারা যায় তখনই রোজার বিষয়টির সার্থকতা বোঝা যায়। সুতরাং মেজাজি রোজাটি আছে বলেই মানুষ এই মেজাজি রোজা পালন করতে করতে হাকিকি রোজার রহস্যটি বুঝতে পারে। এই সিয়াম বিষয়টির কোরান হাদিস হতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরা যায়, কিন্তু আমি অধম এ বিষয়ে আর এগিয়ে গেলাম না এ জন্য যে, এই সিয়াম বিষয়টির মেজাজি এবং হাকিকি ব্যাখ্যাগুলো খুবই সুন্দর এবং মার্জিত ভাষায় যিনি তুলে ধরেছেন তিনি শাহ সুফি সদর উদ্দিন আহমদ চিশতি এবং তাঁর অমর গ্রন্থটির নাম সিয়াম দর্শন। রোজার বিষয়ে কোরানের যতগুলো আয়াত আছে সবগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং রোজার উপর যতগুলো হাদিস আছে প্রায় অধিকাংশ হাদিস (সবগুলো নয়) তুলে ধরেছেন। এই অমূল্য বইটি কয়েকবার পড়লে সিয়াম বিষয়টি দিবালোকের মতো পাঠকের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং সিয়াম বিষয়টির উপর একটি মোটামুটি ধারণা তৈরি হবে।

   রোজা ও ইফতার
   ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী 
                                                                                        .....চলবে.....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন