রোজা বিষয়ে আলোচনা পর্ব.....১
রোজা কথাটি যদিও বাংলায় চালু, কিন্তু ইহা ফারসি ভাষা হতে এসেছে। উর্দুতেও রোজাই বলা হয়। কিন্তু আরবিতে ইহাকে সিয়াম বলে। যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করে তাকে বলে সায়েম। এখন প্রশ্নটি হলো, সিয়াম বলতে কী বোঝায়? সিয়াম অর্থ হলো, প্রত্যাখ্যান, বর্জন, ত্যাগ, বিরত থাকা। ইংরেজিতে রিজেকশন বলা যেতে পারে। সুতরাং যে ব্যক্তি এই প্রত্যাখ্যান, বর্জন, ত্যাগ এবং বিরত থাকার প্রচেষ্টায় লিপ্ত তাকে সায়েম বলে তথা রোজাদার বলে। এখন কথাটি হলো যে, সায়েম তথা রোজাদার কোন বিষয়টি হতে বিরত থাকবে? এবং কী তাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে? প্রত্যাখ্যান করার অথবা বর্জন করার একমাত্র বিষয়টি হল আমিত্ব। আমিত্ব বলতে কী বোঝায়? যে ‘আমি’-টি নির্ভেজাল নয়, বরং ভেজাল আছে সেই ভেজাল ‘আমি’-টিকে বলা হয় আমিত্ব। ‘আমি’-টি কখন ভেজালে পরিণত হয়? যখন ‘আমি’-র সঙ্গে খান্নাসরূপী শয়তানটি বহাল তবিয়তে বাস করে এক ‘আমি’-কে দুই ‘আমি’-তে পরিণত করে। এক ‘আমি’-র মাঝে দুই ‘আমি’ থাকাটাকেই ভেজাল বলে। এই দুই ‘আমি’-র ভেজাল হতে পরিত্রাণ পাবার জন্য, মুক্তিলাভ করার আশায় যে ‘আমি’-টি নকল ‘আমি’-টিকে বর্জন করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত তাকেই রোজাদার বলা হয়। আরবিতে তাকে বলা হয় সায়েম। ইহাই রোজার তথা সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য। মূল উদ্দেশ্যটিকে সামনে রেখে যে ব্যবস্থাপত্রটি দেওয়া হয় সেই ব্যবস্থাপত্রটিতে নানা প্রকার আদেশ উপদেশ থাকে। কারণ যে কোনো মূল বিষয়টিকে প্রয়োগ করতে গেলে ব্যবস্থাপত্রে অনেক রকম আদেশ উপদেশ থাকতে বাধ্য। মনে রাখতে হবে যে, ব্যবস্থাপত্রের আদেশ নিষেধগুলোর পেছনে যে মূল উদ্দেশ্যটি আছে উহা যেন ভুলে না যাই। মূল উদ্দেশ্যটি ভুলে গেলেই অথবা গুরুত্ব না দিলেই বিষয়টি কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতার বলয়ে আবদ্ধ হয়ে পড়ে এবং অনুষ্ঠানগুলোকেই মূল বিষয় মনে করে মতভেদের উদ্ভব হয়। এই মতভেদ জন্ম দেয় নানা প্রকার ফেরকাবাজির। তখন সমাজ জীবন এবং জীবন পরিচালনার দর্শনগুলো ফেরকাবাজিতে ডুবে যায় এবং বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়াঝাঁটি করে মূল বিষয়টি হতে অনিচ্ছায় বহু দূরে সরে পড়ি। অধম লিখক যেমন বললাম যে, নফ্সের ভেতর খান্নাসরূপী শয়তানটিকে তাড়িয়ে দেবার সাধনার নামটি হল সিয়াম, কিন্তু অন্য গবেষণা হয়তো একথাটি এভাবে না বলে অন্যভাবে বলবে। বলবে দুনিয়া ত্যাগ করতে হবে। বলবে তাগুত ত্যাগ করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, দুনিয়া বলতে কী বুঝায়? দুনিয়া বলতে কিন্তু এই পৃথিবী নামক গ্রহটিকে পরিত্যাগ করার কথাটি মোটেই বলা হয় নি। কারণ দুনিয়া বলতে আপন নফ্সের স্বেচ্ছাচারটিকে বোঝানো হয়েছে। নফ্সের এই স্বেচ্ছাচারটি কেমন করে আসতে পারে? যখন নফ্সের সঙ্গে খান্নাসরূপী শয়তানটিকে জড়িয়ে দেওয়া হয়। কেন খান্নাসরূপী শয়তানটিকে একটি পবিত্র নফসের সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হয়? জড়িয়ে দেওয়া হয় এই জন্য যে, একটি নফস তথা একটি মানুষ কি আল্লাহকে চায়, না চায় না―এই আল্লাহকে চাওয়া আর না-চাওয়ার নামটিই হল পরীক্ষা। এই পরীক্ষাটির জন্যই মানুষকে বানানো হয়েছে।রোজা ও ইফতার
ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী
চলবে......
বি:দ্র: ডা:বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল সুরেশ্বরী রচিত বইসমুহ পাইকারি মূল্যে নিম্নোক্ত ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে........।
ঠিকানা:
সুফিবাদ প্রকাশনালয়
প্রযত্নে:বে-ঈমান হোমিও হল
১০৮ নিউ এলিফ্যান্ট রোড(২য় তলা) ঢাকা-১২০৫
মোবাইল ঃ০১৯১১৫৯৭৭৮০
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=272469246515784&id=100012581327902
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন